Loading...
November 22, 2022

বিশ্বের ছোট মহাদেশ ওসেনিয়া আর সেই মহাদেশের সবচেয়ে বড়দেশ অস্ট্রেলিয়া। আবহাওয়া, পরিবেশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্থায়ী বসবাস অনেক কারণে অনেকে অস্ট্রেলিয়াকে পড়াশুনা করতে যাবার জন্য বিশেষত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা পছন্দের তালিয়ায় সর্বাগ্রে রাখেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর ৬-৭ লক্ষ শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যায়। এই দেশে রয়েছে ১২ হাজারের বেশি সমুদ্র সৈকত। শান্তিপূর্ণ এই দেশ শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু নয় পড়াশুনা শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর দেশ। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বে তৃতীয় দেশ হল অস্ট্রেলিয়া। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজ আলোচনা করবো অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে। আসুন জেনে নিই খুঁটিনাটি সব কিছু তারপর নিজেই করুন, নিজের আবেদন।

কেন অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবেন?

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানের ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে, অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম। শুধু তাই নয়, পড়াশুনা শেষে বসবাসের সুযোগ আছে। আপনি আস্ট্রেলিয়ার PR পেলে নিউজিল্যান্ডেও থাকতে পারবেন। আপনার জন্য সম্ভবনা আরো বেড়ে যাচ্ছে।

Opera House Australia
Image Source: pixabay.com

কমনওয়েলথভুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা আর সবচেয়ে বড় শহর হল সিডনি। অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাঙ্গালী বসবাস করে পার্থ শহরে। অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর ১৪-তম বৃহৎ অর্থনীতি আর পার ক্যাপিটা ইনকামের দিক দিয়ে এই দেশ বিশ্বে দশম। এই দেশের আয়তন ৭৬ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গকিলোমিটার- আর এই দেশে বসবাস করে ২ কোটি ৫৬ লক্ষ । মজার ব্যাপার এই জনসংখ্যার ৩০% মূলত অভিবাসী, তারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। সমুদ্রে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অপরিসীম সম্ভবনা- এই তো অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা

অস্ট্রেলিয়ায় অবেদন করতে প্রয়োজন পড়ে না GRE/ GMAT। তবে আপনার IELTS/ PTE থাকতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা করতে আপনার পূর্ববর্তী একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০% নম্বরের প্রয়োজন পড়বে। আপনাকে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে IELTS-এ পেতে হবে ৬.৫ বা ৭.০ স্কোর। আর PTE পরীক্ষায় অর্জন করতে হবে ৫৮ – ৬০ মার্ক্সের। এই যোগ্যতা থাকলে আপনি অস্ট্রিলিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে পারবেন।

কোর্স সার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

ব্যবসা প্রশাসন, প্রকৌশল, নার্সিং, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সকল বিষয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতোকোত্তর ও পিএইচডি করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। তাই কোর্স নিয়ে ভাবনার কারণ নেই। আপনি আপনার পছন্দের কোর্স এই দেশে পাবেন। শুধু তাই নয়, যে কোন কোর্সে যে কোন প্রোগ্রামে পড়তে পারবেন। আর এজন্যই দরকার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়। আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিচে তুলে ধরা হলঃ

১।  Australian National University (ANU)

২। University of Sydney

৩। University of Melbourne

৪। University of New South Wales (UNSW)

৫। University of Queensland (UQ)

৬। Monash University

৭। University of Western Australia (UWA)

৮। University of Adelaide

৯। University of Technology Sydney (UTS)

১০। University of Wollongong

[উপোরক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা QS Top Universities of 2021 অনুসারে দেওয়া হয়েছে]

National University, Australia
Image Source: Internet

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

অস্ট্রেলিয়ায় বছরে দুইটি সেশন পড়ানো হয়। একটি সেশন ফেব্রুয়ারি ও অন্যটি সেশন জুলাই- এ শুরু হয়।

ভর্তির জন্য প্রথমেই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং আবেদন ফি জমা দিতে হবে। সাধারণত আবেদন ফি জমা না দেওয়া পর্যন্ত আবেদন প্রসেস শুরু হবে না। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে কোন আবেদন ফি-এর প্রয়োজন পড়ে না।

এই দেশে আপনি ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা থেকে শুরু করে সকল ধরণের প্রোগ্রামে যাবার সুযোগ আছে। আমেরিকা, কানাডার মত অস্ট্রেলিয়ায়ও মাস্টার্স কোর্স দুই ধরণেরঃ কোর্স-বেজড ও থিসিস-বেজড। কোর্স বেজড মাস্টার্স প্রোগ্রামে সাধারণত স্কলারশিপ পাওয়া যায় না। সাধারণত নিজের অর্থায়নে পড়তে হয়। তবে কোর্স-বেইজড মাস্টার্সেও আপনি পাবেন স্কলারশিপ। অন্যদিকে, থিসিস-বেজড বা রিসার্চ-বেজড মাস্টার্স প্রোগ্রামে গেলে আপনার ফান্ড বা স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ আছে। থিসিস-বেজড মাস্টার্স প্রোগ্রামে গেলে অবশ্যই প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে নিতে হবে।

এই প্রফেসর খোঁজা বেশ জটিল ও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। কারণ আপনাকে প্রফেসরদের খুঁজে তাদের রিসার্চ এরিয়া-ভিত্তিক নিজের পোর্ট-ফোলিও সাজিয়ে তাকে মেইল করতে হবে এবং তাকে কনভিন্স করতে হবে। প্রফেসররা সাধারণত স্কাইপি, অথবা অন্য মিডিয়ামে আপনার ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে। এই ব্যাপারে বলে রাখি, প্রোফেসরদের মেইল করার সময় সাবধান থাকবেন। অনেকেই একই মেইল বহু প্রফেসরকে করে। এইভাবে ফান্ডিং পাওয়া বেশ কষ্ট্যসাধ্য আর গদ বাঁধা মেইল আপনার সাথে সাথে আপনার দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। প্রফেসর যে শুধু স্কলারশিপ প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন- তা নয়, বরং তার কাছে বরাদ্দ রিসার্চ ফান্ড থেকে আপনাকে RA (Research Assistant) পোস্ট অফার করে থাকে অথবা আপনাকে TA (Teacher’s Assistant) অফার করে।

 

অস্ট্রেলিয়ায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য নিচের ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হয়ঃ

১। সকলএকাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট

২। CV, মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার [প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী]

৩। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র

৪। পাসপোর্টের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি

৫। রেফারেন্স লেটার- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার সম্পর্কে ভালো রিমার্ক্স থাকতে হবে।

৬। IELTS এবং GRE/GMAT [কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ছে বর্তমানে]

৭। Statement of Purpose (SOP)

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভালো করে ঘেটে আপনি দেখে নিবেন, আসলে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের পেছনে পর্যাপ্ত সময় দেওয়াটা তাই খুবই জরুরী।

University of Melbourne, Australia
Image Source: Internet

পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ

অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর পড়তে খরচ হবে ১৫,০০০ থেকে ৩৩,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। আর যদি মাস্টার্স বা ডক্টোরাল প্রোগ্রামে পড়তে যান তাহলে খরচ হবে ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ আছে। মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এ সুযোগটা একটু বেশি। এই স্কলারশিপগুলো কয়েকপ্রকারের হতে পারে- ১) ফুল ফান্ডিং ও লিভিং এক্সপেন্সেস স্টাইপেন্ডসহ স্কলারশিপ ২) ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ ৩) পার্শিয়াল ফান্ডে স্কলারশিপ (১০% থেকে ৮০%)। যত ভালো মানের স্কলারশিপের জন্য আপনি চেষ্টা করবেন আপনার প্রোফাইল তত ভালো হওয়া উচিত এবং আপনি তত বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন।

স্কলারশিপের জন্য ব্রাউজ করতে পারেন নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটঃ

বাংলাদেশিরদের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটঃ

http://dfat.gov.au/about-us/publications/Pages/bangladesh-information-for-intake.aspx

অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ

http://dfat.gov.au/people-to-people/australia-awards/Pages/australia-awards-scholarships.aspx

error: Alert: Content selection is disabled!!