Loading...
November 23, 2022

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষা অর্জনের ডেস্টিনেশন হল ইংল্যান্ড, যাকে সাংবিধানিক ভাষায় বলা হয় United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland. সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এই দেশের ইতিহাস বহু সমৃদ্ধ- বহু প্রাচীন। জ্ঞানের অন্যতম পীঠ হল এই দেশ। তাই তাবদ দুনিয়ার জ্ঞান পিপাসুরা ভিড় জমায় এই দেশে এসে। আর শিক্ষার্থীদের চাহিদার দিকে তাকিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের বিভিন্ন রকম প্রতরণার ফাঁদে ফেলছে। অনেকে আবার না বুঝে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে নাম-সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে। যখন তাদের ভুল তারা বুঝতে পারে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছি, ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন হবে তার বিস্তারিত বিবরণ। তাই, যদি স্বপ্ন হয় ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা তাহলে আর দেরি না করে আর্টিকেলটা পড়ে দেখুন, বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিন আর নিজেই করুন নিজের আবেদন।

কেন ইংল্যান্ডে পড়তে যাবেন?

ইংল্যান্ড বিশ্বজুড়ে পড়াশুনা করার জন্য অন্যতম স্থান। প্রতি বছর এই পূন্যভূমিতে বিদ্যার্জনের জন্য পাড়ি দেয় প্রায় ৫,০০,০০০ জ্ঞানপিপাসু। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অফার করা হয় ৫০,০০০ এর বেশি কোর্স আর আছে ২৫ এর বেশি সাবজেক্ট এরিয়া। আর বিশ্বে চাকুরীদাতা থেকে শুরু করে সকল নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংল্যান্ডের ডিগ্রীর কদরও কম নয়। তাই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ও নিজেকে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে তুলে ধরার জন্য আপনার গন্তব্যও হতে পারে ইংল্যান্ড।

Study in England
Image Source: pexels.com

ইংল্যান্ডে পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা

ইংল্যান্ডে ৩-৪ বছরের ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হতে প্রয়োজন পড়বে ১২ বছরের শিক্ষা জীবনের আর সাথে প্রয়োজন পড়বে IELTS স্কোর কমপক্ষে ৬.০ -৬.৫। আর মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়তে যেতে প্রয়োজন পড়বে ১৬ বছরের শিক্ষা জীবন ও সাথে IELTS স্কোর ৬.৫ – ৭.০। এদেশে পড়াশুনা করতে আপনাকে আপনার একাডেমিক কোর্সে ৫০-৫৫ শতাংশের বেশি মার্ক্স অর্জন করে আসতে হবে।

কোর্স সার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

ইংল্যান্ডে নানা ধরণের কোর্স অফার করা হয়। আর আপনি ডিপ্লোমা, কারিগরী কোর্স, ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট গ্রাডুয়েট ডিপ্লোমা, পিএইচডি- সব ধরণের কোর্সের জন্য আসতে পারেন ইংল্যান্ডে। আপনি আপনার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বেছে নিবেন আপনার জন্য বেস্ট কোর্স। সাধারণত ইংল্যান্ডে Business School, Hospitality, Tourism and Hotel Management, Pure Science and Engineering, Education Science, Law ও Health & Medicine – এই সব স্কুলের কোর্সগুলো খুবই জনপ্রিয়। MBA, MSC, BBA, ACCOUNTING, MARKETING, HRM, ENGINEERING, LAW, IT, SOCIAL SCIENCE, PUBLIC HEALTH, PHARMACY, DIPLOMA সহ আরও নানা ধরনের বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারবেন ।আপনি এই ইন্ডান্স্ট্রিতে অনেক জবও পাবেন। তাই, ভেবে দেখুন ও সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজের পছন্দের কোর্স বেছে নিন।

ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ছাত্রছাত্রীকে প্রথমে ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে হয়।ইংল্যান্ডে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিল একটি তথ্য সম্ভার হিসেবে কাজ করে। ব্রিটিশ কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের ইংল্যান্ডের কোর্সগুলো ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে থাকে।

ইংল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অন্ত নেই। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়েই যান-না-কেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় সমন্ধে আগে একটু অন-লাইন রিসার্চ করে নিতে ভুলবেন না। কারণ, অনেকেই ভুলে করে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন, যাদের কোর্স অফার করার লিগাল অথরিটি নেই। World Ranking-এ আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দেখে নিন। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেওয়া হল, খুঁজে দেখুন আর পছন্দ করে দেখুন আপনার জন্য প্রযোজ্য কোর্স কোনটি হবেঃ

  1. University of Oxford
  2. University of Cambridge
  3. Imperial College London
  4. UCL
  5. London School of Economics and Political Science
  6. University of Edinburgh
  7. King’s College London
  8. University of Manchester
  9. University of Warwick
  10. University of Bristol
University in England
Image Source: pexels.com

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

ইংল্যান্ডে বছরে দুইটি সেশন আছেঃ

১। অটাম সেশন ও

২। স্প্রিং সেশন

অটাম সেশন শুরু হয় সাধারণত সেপ্টেম্বর – জানুয়ারি মাসে আর স্প্রিং সেশন শুরু হয় জানুয়ারি – জুন মাসে। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন ধরণের ও বিভিন্ন ক্যাটাগরীর বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট খুঁজে দেখলে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে পাবেন ভর্তির আবেদন পত্র, সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে করতে পারবেন আবেদন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আবার দেয় অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ। আপনি যে কোন তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন এডমিশন অফিসের সাথে- তারা আপনাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে। ইংল্যান্ডে ভর্তির আবেদন বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার- প্রায় ৭-৮ মাস সময় লেগে যায়, সব কিছু প্রসেস করতে। তাই হাতে প্রায় ১ বছর সময় নিয়ে আবেদন করতে হবে।

নিচে ইংল্যান্ডে আবেদনের জন্য মূল ডকুমেন্টসগুলোর তালিকা দেওয়া হলঃ

১। একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট- অবশ্যই ইংরেজীতে ও নোটারাইজ করে দিতে হবে।

২। IELTS এর সনদ

৩। CV, মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার

৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র

৫। পাসপোর্টের কপি

পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ

বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে ইংল্যান্ডে পড়াশুনার ব্যয় অনেক কম-বেশি হয়। এই দেশে পড়াশুনার ব্যয় ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি মূলত ফাউন্ডেশন কোর্স বা প্রিলিমিনারি কোর্সে পড়তে প্রতি বছর খরচ হয় ৪,০০০-১২,০০০ পাউন্ড। কলা বিষয়ে পড়তে প্রতি বছর খরচ হবে অনুমানিক ৭,০০০ – ৯,০০০ পাউন্ড। আবার, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে আপনার প্রয়োজন পড়বে ৭,০০০ – ১২,০০০ পাউন্ড। মেডিক্যাল বিষয়ে পড়তে সব জায়গায় খরচ একটু বেশিই হয়। সাধারণত মেডিক্যাল সাইন্সে আপনার খরচ ১০,০০০ – ২১,০০০ পাউন্ড। ইংল্যান্ডে বিজনেস স্কুল বেশ জনপ্রিয়। এখানে বিজনেস স্কুলে পড়তে প্রতি বছর ৪,০০০ পাউন্ড থেকে ৩০,০০০ পাউন্ড খরচ হবে।

Students in England
Image Source: pixabay.com

ইংল্যান্ডে পড়াশুনার খরচ বেশি হলেও এখানে অনেক ধরণের স্কলারশিপেরও সুযোগ আছে। সরকারি স্কলারশিপের পাশাপাশি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েব সাইটেই পাবেন বিভিন্ন স্কলারশিপের খবরা-খবর।

আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ

ইংল্যান্ডে পড়তে আপনাকে টিউশন ফি ও লিভিং কস্ট বাবদ ব্যাংকে ১০,০০০ – ১৫,০০০ পাউন্ড দেখাতে হবে। এই পরিমাণ অর্থ আপনাকে কমপক্ষে ১ মাস আপনার একাউন্টসে আছে এমন দেখাতে হবে। তবে চিন্তা নেই- ভিসা পাওয়ার পর এই টাকা আপনি তুলে ফেলতে পারবেন। জার্মানীর মত ব্লক একাউন্টসে টাকা রাখতে হবে না আপনাকে।

ভিসার জন্য আবেদন

ইংল্যান্ডে ভিসার কাজ শেষ করতে ৩ থেকে ৩.৫ মাস সময় লাগে। তাই সময় নিয়ে আবেদন করতে হবে।

ইংল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা নামে কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। মূলত, স্টাডি পারমিট দেওয়া হয়, যেটাকে স্টুডেন্ট ভিসা বলা হয়। এই স্টাডি পারমিট দিয়ে আপনি ইংল্যান্ডে বসবাস করতে পারবেন না। ইংল্যান্ডে ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) নামক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

Visa Application - England
Image Source: Internet

এবার জেনে নিন ভিসা আবেদনর জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন পড়বেঃ

১। পাসপোর্ট ও  ফটোগ্রাফ

২। CV, মোটিভেশন ও রেফারেন্স

৩। সকল মার্কশিট ও সনদ

৪। No Objection  Certificate [শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে]

৫।  বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার ও টিউশন ফি প্রদানের রশিদ

৬। ব্যাংক সলভেন্সি পেপার

৭। পুলিশ ক্লিয়ারান্স ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্টস

৮।IELTS এর কপি

৯। মেডিকেল চেক আপ রিপোর্ট

ইংল্যান্ডে থাকাকালীন আপনার খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র হিসেবে যুক্ত করুন

১. ইংল্যান্ডের ব্যাংকে আপনার নিজের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

২. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

৩. ব্যাংক ড্রাফট।

৪. এক বছরের থাকা ও পড়ার খরচ পরিশোধ হয়েছে, তার প্রমাণপত্র।

৫. যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনার ফান্ডিং দিবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত চিঠি।

৬. আপনি যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন, তবে তার প্রমানপত্র।

ইংল্যান্ডে পার্ট টাইম জব ও জীবনযাত্রার ব্যয়

ইংল্যান্ডে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পাবেন আর ছুটিতে আপনি ফুল টাইম কাজ করার সুযোগ পাবেন। আবার আপনার সাথে আপনার স্পাউস থাকলে তিনিও কাজ করার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে ইউকে গভারন্মেন্ট স্টুডেন্টদেরকে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে ।

ইংল্যান্ডে আপনি কোথায় বসবাস করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার দৈনন্দিন খরচ ও আবাসিক ব্যবস্থার জন্য কত খরচ হবে। আপনি চাইলে আবাসিক ব্যবস্থা ও জীবন ধারণের খরচ ৪০০ – ৫০০ পাউন্ডের মধ্যে মেটাতে পারবেন।আপনি কি মানের লাইফ লিড করতে চান তার উপর এটা ডিপেন্ড করে ।

Road in London
Image Source: pexels.com

ইংল্যান্ডে স্থায়ী বসবাস এর সুযোগ

আর আপনি বৈধভাবে ৮ থেকে ১০ বছর থাকার পর PR এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে রাখি ইংল্যান্ড ২০২১ সাল থেকে তাদের PR সংক্রান্ত নীতিমালায় বেশ কিছু আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। যদি ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন শিক্ষার্থী পড়াশুন শেষ করেন, তাহলে তিনি ২ বছর মেয়াদী Post Study Work (PSW) ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে। আর আপনি যদি কমপ্লিট করেন পিএইচডি, তাহলে আপনি ৩ বছর মেয়াদী PSW ভিসা। যদি দুর্ভাগ্যবশত এই ভিসার এই সময়ে যদি আপনি কোন জব ম্যানেজ করতে না পারেন, তাহলে আপনি আবার কোন কোর্সে পড়া শুরু করতে পারেন এবং ডবল ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন। পরবর্তীতে আবার আপনি PSW ভিসায় আবেদন করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনি চাইলে, আপনার বেটার-হাফ (স্বামী/ স্ত্রী)- কে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসতে পারেন আর আগেই তো বলেই, আপনার স্পাউস এলে তিনি ফুল-টাইম জব করার সুযোগ পাবেন।

ইংল্যান্ড অপার সম্ভবনার দেশ। এই দেশে আপনি আপনার নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন। কিন্তু, ইংল্যান্ডে যেমন সম্ভবনা তৈরী হয়েছে, তেমনি প্রতারক চক্রও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই যাচাই বাছাই করে আবেদন করুন আর গড়ে তুলুন নিজের ভবিষ্যৎ।

City of London
Image Source: pixabay.com

তথ্যসুত্রঃ

November 21, 2022

বিশ্ব এখন আপনার হাতের মুঠোয়। আপনি চাইলে ইন্টারনেটের এক ক্লিকে দেখছেন আপনার বিদেশী বন্ধুদের বা আত্মীয় স্বজনদের। শুধু কি তাই, আপনি চাইলেই পাড়ি জমাতে পারেন বিশ্বের যেকোন দেশে। আর যাদের ইচ্ছা বাইরের দেশের ডিগ্রী তাদের জন্য বিশ্ব আজ উন্মুক্ত। যে কোন দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপ অনেকের প্রিয় ডেস্টিনেশন। আর ইউরোপের মনোরম দেশ আস্ট্রিয়া, সে তো অনেকেরই স্বপ্নের স্থান। এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরবো আস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের কিছু কার্যকরী গাইডলাইন।

অস্ট্রিয়া দেশ হিসেবে যেমন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আস্ট্রিয়া। ভিয়েনা রাজধানী আর ইউরো মুদ্রা বিশিষ্ট আস্ট্রিয়ার ভাষা জার্মান/ডয়েচ। ৪৭৮ বিলিয়ন ডলার (২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী) জিডিপি-এর এই দেশে প্রায় ৮৯ লক্ষ জনগণ বসবাস করে এবং আস্ট্রিয়ার আয়তন ৮৩,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার। আর্থিক মাথাপিছু আয়ের হিসেব অনুযায়ী অস্ট্রিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। দেশটির অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত। শীতকালে এই দেশের তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি থেকে নীচে নেমে যায় (সেলসিয়াস স্কেল) আর গরম কালে তাপমাত্রা২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে।

Hallstatt, Austria
Image Source: pixabay.com

যোগ্যতা যাচাই ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই

অস্ট্রিয়ায় ব্যাচেলর কোর্স সাধারণত জার্মান/ডয়েচ ভাষায় করতে হয়। ব্যাচেলর কোর্স এর জন্য জার্মান/ডয়েচ B2 লেভেল সম্পন্ন করতে হবে। ল্যাংগুয়েজ কোর্স আপনি বাংলাদেশেও করতে পারেন অথবা অস্ট্রিয়াতে ও করতে পারেন।  বাংলাদেশে সম্পন্ন না করলে প্রথম একবছর অস্ট্রিয়াতে জার্মান ভাষা পড়ার পরে ব্যাচেলর কোর্স করতে হবে।

অস্ট্রিয়ার প্রধান পড়াশুনার ভাষা জার্মান হলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজী ভাষায় কোর্সও রয়েছে। আপনি যদি ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যেতে চান তাহলে HSC + ১ বছর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে হবে। সেই সাথে ন্যূনতম ৫০% মার্ক্স অর্জন করতে হবে। যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে চান, তাহলে ব্যাচেলর ডিগ্রী আর পিএইচডি প্রোগ্রামে যেতে মাস্টার্স ডিগ্রী থাকতে হবে।

অস্ট্রিয়ায় মোট ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২১টি এপ্লাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্ট নিচে দেওয়া হলঃ

  1. University of Vienna | http://www.univie.ac.at
  2. Vienna University of Technology | http://www.tuwien.ac.at
  3. Medical University of Vienna | http://www.mediuniwien.ac.at
  4. University of Graz | http://www.uni-graz.at
  5. Graz University of Technology | http://www.tugraz.at
  6. University of Innsbruck | http://www.uibk.ac.at
  7. Vienna University of Economics and Business | http://www.wu.ac.at/

ইউরোপের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। ১২০টির বেশি ডিগ্রি প্রোগ্রাম পড়ার সুযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২২টি ব্যাচেলর প্রোগ্রাম, ২৯টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম, ৪৯টি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম এবং ২৪টি টিচার অ্যাক্রিডিয়েশন প্রোগ্রাম ছাড়াও ৮০টি ক্ষেত্রে ডক্টরাল প্রোগ্রাম পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

 

কোর্স খুঁজতে নিম্মোক্ত ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন-

http://www.studienwahl.at/Content.Node/homepage.en.php

TU Wien, Austria
Image Source: Internet

ভাষাগত যোগ্যতা

অস্ট্রিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারনত জার্মান ভাষায় শিক্ষাদান করা হয়। যদি আপনি জার্মান ভাষায় পড়াশুনা করতে চান, তাহলে আপনাকে জার্মান ভাষার B2 পরীক্ষায় পাশ করে আসতে হবে। আর আপনি চাইলে আস্ট্রিয়া গিয়েও এই কোর্স করতে পারবেন। সরকারী ইউনিভার্সিটিগুলোতে জার্মান ভাষা শিখতে প্রতি সেমিস্টার ৪৫০-৫০০ ইউরো এর মত লাগবে। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে সেটা অনেক বেশি ( ১৫০০-২৫০০ ) ইউরো এর মত লাগবে।

 

ইউনিভার্সিটিতে ভ র্তির জন্য IELTS অত্যাবশ্যকীয় নয়, তবে ভিসা আবেদনের পূর্বে অবশ্যই IELTS স্কোর ৫.৫ থাকতে হবে। মাস্টার্স কোর্স ইংরাজি ও জার্মান ভাষাতে আছে। ইংরাজিতে পড়াশোনার জন্য IELTS ৬/৬.৫ থাকতে হবে।

ডকুমেন্টস সত্যায়ন

সকল একাডেমিক কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হবে যথাক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রিয়ার এম্বেসী দ্বারা। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র সত্যায়ত করার পর আপনি যখন এগুলো এম্বেসীতে জমা করবেন, এম্বেসী কনস্যুলেট সেগুলোকে VFS ঢাকা অফিসে পাঠাবে এবং এর ফি বাবদ ৪৩,১২০ টাকা থেকে ৪৭,০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এরপর সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করার পর VFS সেটা পুনঃরায় এম্বেসীতে পাঠাবে এবং তারপর এম্বেসী কনস্যুলেট তা সত্যায়িত করবে।

অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেটর, ঢাকা, বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট ও ঠিকানা :

Austrian Honorary Consulate in Dhaka, Bangladesh –

Safura Tower, 5th Floor, 20 Kemal Ataturk Avenue,
Dhaka – 1213, Bangladesh
Phone (Local): (02) 986.1707, Internation: +880.2.986.1707
Email: [email protected]

ভিএফএস ঢাকা এর ঠিকানা –

Austria Visa Application Centre

4th Floor, Delta Life Tower, Plot 37, Road 90,
Gulshan North, Dhaka-1212, Bangladesh.

Submission schedule: 14:00 to 16:30 (Sunday -Thursday).
Passport retrieval schedule: 15:00 to 16:00(Sunday – Thursday).
Information: Sunday to Thursday 14:00 to 15:00 hours

ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া

অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাধারণত দুই সেমিস্টার থাকে। প্রথমটি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে আর পরেরটি মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। অস্ট্রিয়ার ভর্তি, অফার লেটার, ডকুমেন্ট এটাসটেশন, ভিসা- পুরো প্রসেস অনেক সময় সাপেক্ষ (৬ থেকে ১২ মাস)। তাই আগে ভাগেই কাজ শুরু করতে হবে।

ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা নীচে দেওয়া হলঃ

১। পূরণকৃত আবেদন ফর্ম

২। সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট এর সত্যায়িত কপি

৩। আইইএলটিএস (ন্যূনতম ৬.০) / জার্মান B2 সনদ

৪। এন আই ডি/পাসপোর্ট কপি

৫। মোটিভেশন লেটার/ সিভি/ রেফারেন্স লেটার

৬। কাজের অভিজ্ঞতা/ রিসার্স পেপার (যদি প্রয়োজন হয়)

Students in Austria
Image Source: Internet

বিনা বেতনে বা স্বল্প খরচে পড়ার সুযোগ

ইউরোপের যেসব দেশে স্বল্প খরচে পড়াশোনা করা যায় তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। অস্ট্রিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার টিউশন ফি দিতে হয় না, তবে সেমিস্টার ফি ১৯ ইউরো দিতে হবে। তবে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আবেদন করার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় – এর সাথে মেইল করে এর এডমিশন ও টিউশন ফি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়াই ভালো।

আর্থিক সচ্ছলতার প্রমান/ব্যাংক সলভেন্সি সনদ

ব্যাংক সলভেন্সির জন্য আপনার একাউন্টসে ৫৮৯৭.১৬ ইউরো (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের নীচে হয়) অথবা ১০৬৭৮.০৮ (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের বেশি হয়) ইউরো। আপনার স্পন্সর মা-বাবা-স্ত্রী থেকে যেকোন আত্মীয় হতে পারে। তবে মনে রাখবেন টাকার উৎস, ট্যাক্সের ডকুমেন্ট সকল কিছু ভিসার জন্য জমা দিতে হবে। স্পন্সর যদি আস্ট্রিয়ায় বসবাস করে তবে আরো ভালো। ভিসা পাওয়ার পর আপনি চাইলে এই টাকা তুলে ফেলতে পারবেন।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে এম্বেসী না থাকা ভিসার জন্য আপনাকে ইন্ডিয়াতে যেতে হবে। এজন্য প্রথমেই আপনাকে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। যে সকল কাগজপত্র জমা দিবেন তার মূল কপির সাথে ২ সেট ফটোকপিও নিয়ে যাবেন।

ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ

১। পূরণকৃত আবেদন ফর্ম ও সাথে সংযুক্ত পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫ মিমি x ৪৫ মিমি)

২। এপয়েন্টমেন্ট লেটার আর এপন্টমেন্ট নিতে ভিজিট করুনঃ

https://appointment.bmeia.gv.at/?Office=new-delhi
৩। পাসপোর্ট

৪।ইউনিভার্সিটি অফার লেটার

৫। সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত/ মোটিভিশন লেটার

৬। সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট এর সত্যায়িত কপি

৭। আইইএলটিএস বা জার্মান ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট

৮। টিউশন ফি পেমেন্ট-এর কপি

৯। ট্রাভেল হেলথ ইনস্যুরেন্স

১০। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কনসুলেট অফিস কর্তৃক সত্যায়িত)

১১। একোমোডেশ ন কনফার্মেশন লেটার

১২। বার্থ সার্টিফিকেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং কনসুলেট অফিস কর্তৃক সত্যায়িত)

১৩। জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট (মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য)

১৪। স্পন্সের এফিডেভিড পেপার

১৫। স্পন্সর যদি ব্যবসায়ী হয়, তাহলে

  • ৬-মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • আপডেটেড TIN ও ট্যাক্স রিটার্ন পেপার

স্পন্সর চাকুরিজীবি হলে প্রয়োজন হবে

  • আই,ডি ও স্যালারী উল্লেখপূর্বক জব সার্টিফিকেট
  • জব আই,ডি কার্দের কপি
  • ৬-মাসের স্যালারী স্টেটমেন্ট

১৬। স্পন্সরের একাউন্ট থেকে এপ্লিকেন্টের একাউন্টে টাকা পাঠানোর পেমেন্ট প্রুফ

১৭। এপ্লিক্যান্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

Visa Application - Austria
Image Source: Internet

অস্ট্রিয়ান এম্বাসি নিউ দিল্লি এর ঠিকানাঃ

Austrian Embassy New Delhi

EP-13, Chandragupta Marg Chanakyapuri New Delhi 110 021 India

T: (+91/11) 2419 2700
F: (+91/11) 2688 6929
e-mail: new-delhi-ob(at)bmeia.gv.at

Opening hours: Mo – Th 08:30 – 17:00, Fr 09:00 – 15:00

জীবন যাত্রার ব্যয় এবং পার্ট টাইম জব

অস্ট্রিয়ায় থাকা খাওয়া বাবদ আপনার ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো প্রতি মাসে খরচ হবে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত আপনি এই দেশেও ২০ ঘন্টা পার্ট টাইম চাকুরি করতে পারবেন। তবে সামারে ফুল টাইম জব করার সুযোগ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন রেস্তোরা, শপিংমল, হোটেলে কাজ করতে পারবেন।  তবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রিয়া যাওয়ার  সময় সাথে ৬-৮ মাসের খরচ নিয়ে যাওয়াই উত্তম। এছাড়া জার্মান ভাষা জানা থাকলে জব পাওয়ার সম্ভবনা একটু বেশি থাকে।

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে নূন্যতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) জন্য আবেদন করতে হবে।আর পড়াশুনা শেষে এক বছরের জব সার্চ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

Life in Austria
Image Source: pixabay.com

সুতরাং আস্ট্রিয়ায় পড়তে যেতে চাইলে আপনি এখন নিজেই করতে পারবেন নিজের আবেদন।

তথ্যসুত্রঃ

November 21, 2022

আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা লাভের অন্যতম পীঠস্থান হল সুইডেন। উন্নত জীবন, পড়াশুনা, এবং গবেষণার অপার সমাহার রয়েছে এই দেশটিতে। আর এসব কারণেই উচ্চ শিক্ষা পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সুইডেন।

সুইডেন ইউরোপের অন্যতম অত্যাধুনিক দেশ। এ দেশের মুদ্রার নাম ক্রোনা। এ দেশে শিক্ষার হার ৯৯%। শিক্ষার্থীদের এই পছন্দের ডেস্টিনেশন নিয়ে আপনাদের সামনে তথ্য উপাত্ত সহ আমরা আলোচনা করবো সুইডেনে উচ্চশিক্ষার সকল খুটি নাটি বিষয় সম্পর্কে।

Castel in Sweden
Image Source: pixabay.com

সুইডেনের একাডেমিক স্ট্রাকচার ও সেমিস্টার

সুইডেনের শিক্ষা ব্যবস্থা “National Standard of Academic Education” এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রফেশনাল এডুকেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ দেশে অনার্স প্রোগ্রামে সুইডিশ ভাষা জানা থাকলে ভালো- তবে না জানা থাকলেও সমস্যা নেই, কারণ, এ দেশের Second Language হল ইংলিশ।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধিকাংশ কোর্স হল ইংরেজী মাধ্যমে অফার করা হয়। প্রায় ৬০০ এর বেশি কোর্স মাস্টার্স প্রোগ্রামে অফার করা হয় এবং সবগুলোই ইংরেজী মাধ্যমে অফার করা হয়।

সুইডেনে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম ৩-৪ বছরের, মাস্টার্স প্রোগ্রাম ১-২ বছরের হয়ে থাকে। এদেশে ৬ মাসের ডিপ্লোমাসহ PhD, Post-Doctoral এর সুযোগ রয়েছে। আর আপনি যদি প্রশিক্ষণমূলক পড়াশুনা করতে চান তারও ব্যবস্থা রয়েছে এই দেশে। প্রশিক্ষণমূলক কোর্সসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় “National Agency for Higher Vocational Education” এর মাধ্যমে।

Study in Sweden - Select University
Image Source: Internet

আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্ট এখানে সংযুক্ত করা হলঃ

  1. Uppsala University
  2. KTH Royal Institute of Technology
  3. Lund University
  4. University of Gothenburg
  5. Linkoping University
  6. Umea University
  7. Chalmers University of Technology
  8. Stockholm University

সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুইটি সেমিস্টার রয়েছে- স্প্রিং সেমিস্টার ও অটাম সেমিস্টার

(স্প্রিং সেমিস্টার (Spring Semester) শুরু হয় মধ্য জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত। এই সেমিস্টারে আবেদন করা শুরু হয় মে মাস থেকে।

(অটাম সেমিস্টার (Autumn Semester) শুরু হয় পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত আর এই সেমিস্টারের আবেদন শুরু হয় মধ্য অক্টোবর থেকে।

এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল স্প্রিং সেমিস্টারে শুধু শর্ট কোর্স (৬ মাস ) অফার করা হয়ে থাকে। তাই এই সেমিস্তারে এপ্লাই করলে সাধারণত আপনি ৬ মাসের ভিসা পাবেন। অন্য দিকে অটাম সেমিস্টারে সাধারণত অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনি মাত্র ১৩ মাসের ভিসা পাবেন- যদিও কোর্স ডিউরেশন ৩/ ৪ বছর অথবা ১/২ বছরের হয়ে থাকে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই- আপনি চাইলে আবেদন করে সময় সীমা বাড়িয়ে নিতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ হওয়ায়  আপনাকে হাতে সময় রেখে মাঠে নামতে হবে।

কোর্স বাছাই ও ভর্তি আবেদন পর্ব

সুইডেনে কেবল একটি ওয়েবসাইট দিয়ে সব বিশ্ববদ্যালয়ে আবেদন করা হয়। এর অন্য কোন উপায় নেই। আপনার সুবিধার্থে লিঙ্কটি নিচে দেওয়া হলঃ

https://www.universityadmissions.se/intl/start  

https://www.universityadmissions.se/intl/search

প্রথমে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার নিজের সঠিক তথ্য দিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় ও আপনার পছন্দের কোর্সটি বাছাই করতে হবে। মনে রাখবেন, একই তথ্য দিয়ে একাধিক একাউন্ট খুললে সবগুলো একাউন্ট ব্যান হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব পোর্টাল ঘুরে কোর্স পছন্দ করে এই ওয়েব সাইটে সেটা সিলেক্ট করে দিতে পারবেন।

একটি সেমিস্টারে আপনি ৪ টির বেশি কোর্সে এপ্লাই করতে পারবেন না ।

Students in Sweden
Image Source: pixabay.com

ভর্তি আবেদন ফি ও কাগজপত্র পাঠানোর উপায়

প্রথমেই বলে রাখি, আবেদনের জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৯০০ ক্রোনা। মূলত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কিন্ত আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড নাও থাকে তবে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমেও এই অর্থ পরিশোধ করা যাবে।

এখন আসি কি কি ডকুমেন্টস পাঠাতে হবে তার ফিরিস্তত নিয়ে। সাধারণত ব্যাচেলর এবং মাস্টার্সের মার্কশীট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়িত করে হার্ড কপি পাঠাতে হবে। এটি আপনি সরকারি ডাক বিভাগ বা DHL এর মাধ্যমেও পাঠাতে পারবেন। আর IELTS স্কোর, মোটিভেশন লেটার (Motivation Letter), পাসপোর্টের কপি, এবং কিছু ক্ষেত্রে সিভি (CV) ইত্যাদির সফটকপি Upload করতে হবে। এই তথ্যগুলো কোর্সের ওয়েবসাইটে সঠিক ভাবে খুঁজে দেখতে হবে। ভুলে করলে একদমই চলবে না।

লিঙ্কঃ https://www.universityadmissions.se/en/All-you-need-to-know1/Applying-for-studies/Documenting-your-eligibility-for-studies/Instructions-for-Masters-applicants/Specific-requirements-for-my-country1/bangladesh/

সুইডিশ না ইংলিশঃ IELTS প্রয়োজন কি না?

IELTS ছাড়া আপনি ভর্তির আবেদন করতে পারবেন যদি আপনার Medium of Instruction হয় ইংরেজী। কিন্তু, মনে রাখবেন IELTS ছাড়া আবেদন করা গেলেও সে ক্ষেত্রে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত, IELTS দিয়েই আবেদন করা উচিত। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য 6.0 আর মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য 6.5 স্কোর থাকলে ভালো হয়।

সেমিষ্টার টিউশন ফি ও মাসিক বসবাসের খরচ

বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স ভেদে টিউশন ফি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে বছরে আনুমানিক প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,৪০,০০০ ক্রোনা টিউশন ফি দিতে হবে যদি আপনি সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়তে চান। এখানে খাওয়া থাকা বাবদ ৫০০০ – ৮০০০ ক্রোনা প্রয়োজন পড়ে প্রতি মাসে। তবে আপনি পার্ট টাইম জব করে সহজেই এই খরচ বহন করতে পারবেন।

Life in Sweden 01
Image Source: pixabay.com

আছে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ

স্কলারশিপ সুইডেনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই দেশে দুই ধরণের স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে থাকে- প্রথমটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং অপরটি দেওয়া হয় সুইডিশ সরকারের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপটি শুধু টিউশন ফি এর উপর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি স্কলারশিপেরও সু্যোগ রয়েছে। এই সরকারি স্কলারশিপে টিউশিন ফি এর পাশাপাশি মাসিক ভাতাও দেওয়া হয়ে থাকে। এটি SI স্কলারশিপ নামে পরিচিত।

নিচে SI স্কলারশিপের লিঙ্ক দেওয়া হলঃ

https://studyinsweden.se/scholarships

মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হবার পর এই স্কলারশিপের আবেদন করতে হয় এবং সাধারণত মার্চ মাস থেকে এই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আর্থিক সচ্ছলতা বা ব্যাংক সলভেন্সি

আপনি যদি এক বছরের জন্য পড়তে চান, তাহলে আপনাকে ৮,১৯০ করে ১০ মাসের খরচ ব্যাংকে রাখতে হবে। আবার যদি দুই বছরের জন্য যান তাহলে আনুপাতিক হারে এই টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকবে। মনে রাখবেন এই অর্থ আপনার নামে ব্যাংকে রাখতে হবে আর ভিসা আবেদনের ৩ মাস আগ থেকে এই টাকা আপনার একাউন্টসে থাকতে হবে। এই ব্যাপারে আরো স্বচ্ছ ধারণা পেতে সুইডিশ এম্বেসীতে যোগাযোগ করতে হবে।

ভিসার জন্য আবেদন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি নিশ্চিত হবার পর যদি স্কলারশিপ না পেয়ে থাকেন তবে টিউশন ফি জমা দিতে হবে। এরপর টিউশন ফি জমা দেওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

আপনার সুবিধার্থে চেকলিস্ট করে দেওয়া হলঃ

১। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার

২। টিউশন ফি-এর পেমেন্ট কপি বা স্কলারশিপের ডকুমেন্ট

৩। ব্যাংক সলভেন্সি পেপার

৪। পাসপোর্টের কপি

৫। স্টাডি পারমিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেল সহ)

৬। ভিসা ফি

Visa Application - Sweden
Image Source: pixabay.com

প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এম্বেসী ওয়েবসাইট ভিসিট করুণ। মনে রাখবেন, খুটিনাটি বিষয়ের জন্য ভিসা রিজেক্ট হয়ে থাকে।

সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে ইন্টারভিউ দিলে পেয়ে যাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত ভিসা।

লিঙ্কঃ

http://www.swedenabroad.com/en-GB/Embassies/Dhaka

http://www.migrationsverket.se/English/Private-individuals/Moving-to-someone-in-Sweden.html

স্পাউস ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া

আপনি চাইলে পুরো পরিবার অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী- সন্তানাদিসহ সুইডেনে যেতে পারবেন। আর তাই সুইডেন শিক্ষার্থীদের কাছে এত জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংক সলভেন্সির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

নিচে একটা রাফ এস্টিমেট দেওয়া হলঃ

১। নিজের জন্য ব্যয়ঃ ১০ x ৮,১৯০ ক্রোনা / প্রতিবছর

২। স্পাউসের জন্য ব্যয়ঃ ১২ x ৩,৫০০ ক্রোনা / প্রতিবছর

৩। বাচ্চার জন্য ব্যয় (প্রতি জন): ১২ x ২১০০ ক্রোনা / প্রতিবছর

যোগ করার পর প্রাপ্ত অর্থ আপনার ব্যাংকে দেখাতে হবে। আশার কথা হল। স্ত্রী বা স্বামী একই সাথে জব করতে পারবেন। এরজন্য আপনার আলাদা কোন ভিসার দরকার হবে না।

ওয়ার্ক পারমিট এবং পার্ট টাইম জব

সুইডেনে পার্ট টাইম জবের কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। শিক্ষার্থীরা নিজের ইচ্ছা মত পার্ট টাইম জব করতে পারবে। এখানে বড় শহরগুলোতে খুব সহজেই পার্ট টাইম জব পাওয়া যায়। তবে ছোট শহরগুলতে সুযোগ একটু কম।

সুইডেনে ৩০ ক্রেডিট শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা ফুল টাইম কাজ করতে পারবেন। কাজ পাওয়ার পর আপনি ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে হবে। ফুল টাইম জবের সময় সীমা সাধারণত ৮-১০ ঘন্টা হয়ে থাকে। সুইডিশ ভাষা জানা না থাকলে কাজ পাওয়া একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই, আমার অনুরোধ, সুইডেনে যাবার আগে অবশ্যই সুইডিশ ভাষার কোর্স করে যাবেন।

Life in Sweden
Image Source: pixabay.com

কোর্স শেষে চাকুরীর সুযোগ ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির সুযোগ

পড়াশুনা শেষে আপনি ৬ মাসের জন্য জব সার্চ ভিসা এপ্লাই করতে পারবেন। ওয়ার্ক পারমিটে আবেদনের পর আপনি পেয়ে যাবেন ২ বছরের রেসিডেন্স পারমিট ও পরে আবার ২ বছর এই পারমিট বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

এই ৪ বছর পর আপনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।সুতরাং, আপনার যদি গন্তব্য হয় সুইডেন তাহলে আজই নেমে পড়ুন প্রস্তুতি নিতে।

তথ্যসুত্রঃ

error: Alert: Content selection is disabled!!